দৌলতখান প্রতিবেদক ॥ মুক্তা বেগম, প্রবাসী ফেরত। ২০০৩ সালের সেপ্টেম্বর মাসে পরিবারে অজান্তে নজরুলের সঙ্গে পছন্দের মাধ্যমে তার বিবাহ হয়। প্রথমে তিনি গামেন্টসকর্মী ছিলেন। বিবাহর এক বছরপর একটি পুত্র সন্তান তাদের জীবনে আসে। আদর করে পুত্র সন্তাটির নাম রেখেছেন হ্নদয়। হ্নদয়কে নিয়ে তাদের ছিলো অনেক স্বপ্ন। ২০০৪ সালে হ্নদয়কে তার দাদা হরমুজল হকের কাছে রেখে মুক্তা ও তার স্বামী নজরুল জীবন-জীবিকার টানে প্রবাসে পাড়ি জমান। ২০১৭ সালে প্রবাস থেকে ফেরত আসেন গ্রামের ভোলার দৌলতখান উপজেলার চরপাতা ৪ নম্বর ওয়ার্ডের কালু হাওলাদার বাড়িতে। প্রবাস থেকে এসেও তাদের দাম্পত্যজীবন ভালো কাটছিল। কিন্তু হঠাৎ তাদের জীবনে বয়ে আসে এক কালো মেঘ।
গত ১৮ আগস্ট বিকালে মুক্তা নামাজ শেষে ঘরের অন্য এক কক্ষে ঘুমাচ্ছিলো। এসময় ছেলে হ্নদয় দাঁড়ালো দেশীয় অস্ত্র (দা) দিয়ে হত্যার উদ্দেশে সাত মাসের অন্তঃসত্ত্বা মুক্তাকে এলোপাথাড়ি কুপিয়ে জখম করে। এঘটনায় মুক্তা বাদী হয়ে ছেলে হৃদয়কে প্রধান আসামী করে মঙ্গলবার (৮ সেপ্টেম্বর) দৌলতখান থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। যার নং-২। মামলার পর থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মাসুদ মঙ্গলবার ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন।
কান্না জড়িত কন্ঠে মুক্তা বেগম জানান, ঘটনার দিন দুপুরে নামাজ শেষে নিজ ঘরের এক কক্ষে ঘুমাচ্ছিলাম। ছেলে হৃদয় অপর কক্ষে ছিলো। স্বামী নজরুল বাসার গেটলক করে বাহিরে চলে যায়। এসুযোগে হৃদয় বাসার সকল জানালা বন্ধ করে। পরে রান্না ঘর থেকে দাঁরালো (দা) এনে ঘুমন্ত মুক্তার মাথার ডানে কান ও চোখসহ কোপ দেয়। এতে অন্তঃসত্ত্বা মুক্তার ঘুম ভেঙে গেলে চোখ খুলে ছেলের হাতের দাঁড়ালো দা ধরতে যায়। পরে ছেলে হৃদয় তার পেটে কোপ দিতে চায়। তখন মুক্তা বেগম তার হাত সামনে বাড়িয়ে দিলে হাতের কনুই বরাবর কোপ দেয় হৃদয়। এতে করে মুক্তার রগ কেটে যাওয়ায় বাম হাতের আঙ্গুল তিনটি প্রায় অকেজো হয়ে গেছে। কিন্তু হৃদয় ক্ষ্যান্ত হয়নি। পূনরায় কোপ দিতে গেলে মুক্তা তার পেটের সন্তান রক্ষার্থে তার নিজ পিঠ পেতে দেয়। তাতে হৃদয় নয়টি কোপ দেয় দাঁড়ালো দেশীয় অস্ত্র (দা) দিয়ে। পরে মুক্তার ডাক-চিৎকারে স্বামী নজরুলসহ প্রতিবেশীরা ছুটে এসে মুক্তাকে প্রথমে ভোলা সদর জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য নিয়ে আসেন।
কর্তব্যরত চিকিৎসক অবস্থার অবনতি ঘটলে বরিশাল শের-ই বাংলা মেডিকেল কলেজে দ্রুত হস্তান্তর করে। মুক্তার ডান চোখটি নষ্ট হয়ে গেছে। সাত মাসের এক মৃত মেয়ের জন্ম হয়। ডান হাতের তিনটি আঙ্গুল কাজ করছে না। তিনি আরও জানান, এরকম সন্তান যেনো কোনো মায়ের গর্ভে জন্ম না হয়। আমি আমার ছেলে হৃদয়ের সর্বোচ্চ ফাঁসির দাবি করছি। জানা যায়, কুমিল্লার নূর ইসলামের মেয়ে মুক্তা বেগম ও দৌলতখান উপজেলার চরপাতা ইউনিয়নের হরমুজল হকের ছেলে নজরুল ইসলামের সঙ্গে মুক্তার বিবাহ হয়। বিয়ের বিষয়টি কখনোই মেনে নিতে পারেননি নজরুলের বাবা হরমুজল হক।
এদিকে নজরুল জানান, ১৭ বৎসর আগে চট্টগ্রামে মিনিবাস চালানোর সুবাদে গার্মেন্টসকর্মী মুক্তার সাথে পরিচয় হয়। পরিচয়ের সূত্রে মুক্তা বেগমের সঙ্গে তার বিবাহ হয়। বিবাহের পর মুক্তা সংসার সাজানোর জন্য অর্থনৈতিক উন্নতি করার লক্ষে পাড়ি জমায় ভারতের মরিচা প্রদেশে। ৩ বৎসর কাজ করে দেশের মাটিতে পাড়ি জমান মুক্তা। এর মধ্যে হৃদয়ের জন্ম হয়। হৃদয়ের শিশুকাল শেষ করে দাদা-দাদির কাছে রেখে সংসারের উন্নতি করার জন্য তারা দুজন আবার চলে যা লেবাননে। নজরুল ও মুক্তা ২০১৭ সালে দেশে আসে। দেশে এসে দেখে তারা ঠিকই অর্থনৈতিকভাবে সাবলম্বী হয়েছে। কিন্তু যে সন্তানকে মানুষ করতে এতটা জীবন কষ্ট করলো, সে সন্তান পড়ালেখা করছে না। জড়িয়ে পড়েছে নেশাখোরদের দলে। গড়েছে বখাটে জীবন। ছেলে হৃদয়কে স্বাভাবিক জীবনে ফিরাতে নজরুল ও মুক্তা চেষ্টা করা শুরু করে। নজরুল দেশে এসে ছেলেকে নতুন করে স্কুলে ভর্তি করান। বখাটেদের সাথে মেলামেশা না করার জন্য চাপ দিয়ে শাসন করলে একাধিকবার প্রতিবাদ করে হৃদয়ের দাদা-দাদি। নজরুল তার ছেলেকে সু-পথে আনার জন্য বিভিন্ন স্কুল, মাদরাসায় ভর্তি করান। কিন্তু তাতেও হৃদয় স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসেনি। উল্টো চুরি করা শুরু করে। হৃদয় বখাটেদের স্মরাপন্ন হলে হৃদয়ের বাবা-মা শাসন করলে আবারো দাদা-দাদি শাসনে বাঁধা দেয়। পরে প্রশ্রয় পেয়ে নেশা ও চুরিসহ খারাপ কাজে জড়িয়ে পড়ে হৃদয় । দৌলতখান থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোঃ বজলার রহমান জানান, এঘটনা মুক্তা বাদী হয়ে থানায় মামলা করেছে। আসামীকে গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।’
Leave a Reply